ভারত মহাসাগরে সোমলিয়ার জলদস্যূদের হাতে জিম্মি এমভি আব্দুল্লাহ জাহাজের নাবিকদের একজন মেরিন ইঞ্জিনিয়ার রোকন উদ্দিন। বাড়ি নেত্রকোণায়। জিম্মিহওয়ার পূর্ব মুহূর্তে স্ত্রী তানিয়াকে তিনি মোবাইলে ফোন করেন। এ সময় তিনি বলেন, “জলদস্যূরা জাহাজে ঢুকে পড়েছে, আমার জন্য দোয়া করো, আর মনে হয় কথা হবে না।” এইটুকু বলার পরই সংযোগ কেটে যায়। অপরদিকে এই খবরে তার গ্রামের বাড়িতে পড়ে কান্নার রোল।
খবরে জানা যায়, ভারত মহাসাগরে বাংলাদেশি জাহাজ এমভি আবদুল্লাহ গত মঙ্গলবার সোমালিয়ার জলদস্যুদের কবলে পড়েছে। কেএসআরএম কোম্পানির মালিকানাধীন এই জাহাজটি মোজাম্বিক থেকে দুবাই যাচ্ছিল। জাহজে রোকন উদ্দিনসহ ২৩ জন বাংলাদেশি নাগরিক জলদস্যুদের হাতে জিম্মি হয়ে পড়েছেন। তাদের মধ্যে রয়েছেন নেত্রকোণার মেরিন ইঞ্জিনিয়ার রোকন উদ্দিন।
রোকন উদ্দিনের বড় বোন শাহমিনা আক্তার ভাইয়ের জিম্মি হওয়ার তথ্য নিশ্চিত করেছেন। তিনি জানান, মঙ্গলবার বিকেলের দিকে রোকন তার স্ত্রী তানিয়াকে মোবাইলে কল করে বলে যে, ‘জলদস্যুরা জাহাজে ঢুকে পড়েছে, আমার জন্য দোয়া করো, আর মনে হয় কথা হবে না’। এসব কথা বলার পর সংযোগ কেটে যায়। সন্ধ্যার পর তানিয়া আমাদের এসব কথা জানিয়েছে। খবর শোনার পর আমাদের বাড়িতে কান্নাকাটি শুরু হয়ে যায়। রাতেও রোকনের ফোন চালু ছিল। আমরা কথা বলার চেষ্টা করেছি। কল হচ্ছিল, কিন্তু কেউ রিসিভ করেনি। এরপর থেকে আর কোন খবর পাচ্ছি না।
জানা যায়, মেরিন ইঞ্জিনিয়ার রোকন উদ্দিন নেত্রকোণা সদর উপজেলার ঠাকুরাকোনা ইউনিয়নের বাঘরুয়া গ্রামের মিরাজ আলীর ছেলে। দুই ভাই ও তিন বোনের মধ্যে তৃতীয় তিনি। মেধাবি হওয়ায় বাবা-মা-ভাইয়েরা নিজেরা কষ্ট করে রোকনকে পড়া-লিখা করান। রোকন ২০১৫ সালে মেরিন ইঞ্জিনিয়ারিং পাশ করার পর ২০১৯ সালে বাংলাদেশী বহির্গামী জাহাজ এমভি আব্দুল্লায় চাকুরি গ্রহণ করেন। বর্তমানে তিনি জাহাজের তৃতীয় সর্বোচ্চ কর্মকর্তা হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন। সর্বশেষ তিনি চাকুরি থেকে ছুটি নিয়ে ২০২৩ সালের ২০ মার্চ বাড়িতে এসেছিলেন। এ সময় তানিয়ার সাথে তার বিয়ে হয়। ছুটি শেষে গত বছরের নভম্বের মাসে তিনি চাকুরিতে ফিরে যান। তাঁর স্ত্রী তানিয়া আক্তার ৮মাসের অন্তঃসত্ত্বা।
রোকনের পারিবারিকসূত্র জানায়, গতকাল মঙ্গলবার দুপুরের দিকে বিভিন্ন মাধ্যমে ভারত মহাসাগরে এমভি আবদুল্লাহসহ ২৩ জন বাংলাদেশি নাগরিক সোমালিয়ার জলদস্যূদের কবলে জিম্মি হওয়ার খবর প্রচারিত হয়। এর পর পরই রোকন উদ্দিনের বাড়িতে পড়ে কান্নার রোল। জিম্মি হওয়ার আগে স্ত্রী তানিয়া আক্তারের সাথে একবার মোবাইলফোনে কথা বলতে পেরেছেন রোকন। কথা শোনার পর থেকেই বার বার মুর্ছা যাচ্ছেন স্ত্রী তানিয়া। একই অবস্থা রোকনের মা লুৎফুন্নাহারের, বুক চাপড়ে কাঁদছেন তিনি। রোকনের প্রাণ নাশের আশঙ্কা করছেন তারা। তারা বলেন, রোকনসহ সকলকে উদ্ধারে সরকার প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করবে বলে আশা করছি।